৩১ বছরের শিক্ষকতায় ছুটি নেননি একদিনও

Post Image

শিক্ষকতার বয়স ৩১ বছর। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় কখনো দেরি করে আসেননি স্কুলে। এমনকি অসুস্থ্যতার জন্যেও কখনও  ছুটি নেননি। স্কুলের উপস্থিতি রেকর্ড তালিকা তেমনটিই বলছে। বলছিলাম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ধোপাদি মাধ্যমিক স্কুলের গনিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাসের কথা।

এ বিষয়ে শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি জানি স্কুলে একমাত্র বিজ্ঞানের শিক্ষক আমিই। তাই ছুটি নিলে শিক্ষার্থীরা তাদের গণিত ও বিজ্ঞান ক্লাসে কাউকেই পাবে না’।

শিক্ষার্থীদের এমন সব বিষয় চিন্তা করে শারীরিক অসুস্থ্যতা, পারিবারিক সমস্যা, এমনকি খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘একট সময় ছিল, যখন কাদা ও বুক বরাবর পানি অতিক্রম করে স্কুলে যেতে হতো। এজন্য কখনও কখনও তাকে লুঙ্গি ও জুতা নিতে হতো’।

তার শিক্ষাকতা জীবন সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে অবাক করার বিষয়, নিজের বিয়ের দিনেও সত্যজিৎ বিশ্বাস ক্লাস নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিয়ে সন্ধ্যার পর হওয়ায় আমি ওইদিন ক্লাস শেষ করে শ্বশুর বাড়ি পৌঁছায়। সেখান থেকে পরেরদিন আবারও স্কুলে যায়’।

প্রথমে স্ত্রী একটু বিরক্ত হলেও পরে তাকে বুঝতে পারে এবং সে মনে করে তার স্বামী সঠিক কাজটিই করেছে। এমনকি এখন প্রত্যেকটি কাজে তাকে সহযোগিতা করে বলে জানান সত্যজিৎ বিশ্বাস।

শুধু তাই নয়, বাবার মৃত্যুর দিনেও সত্যজিৎ স্কুল থেকে ছুটি নেননি। তিনি বলেন, ‘বাবা সকালে মারা গিয়েছিলো। আমি সকাল ৮টা পর্যন্ত বাবার মৃত দেহের সঙ্গে ছিলাম। তারপর আমি স্কুলে এসে দুটি ক্লাস নিয়ে আবার বাসায় যাই বাবার শবদাহ করার জন্য’।    

সত্যজিৎ স্কুলে তার ক্যারিয়ার সহযোগী শিক্ষক হিসেবে শুরু করলেও এখন তিনি সহযোগী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ওই এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ভাল স্কুল হিসেবে তার স্কুলকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছেই সত্যজিৎ একজন আদর্শবান শিক্ষক।

সত্যজিৎ বিশ্বাস সম্পর্কে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘তিনি শুধু শিক্ষা দেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন। শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে, সেটা স্কুল কিংবা জীবন সম্পর্কিত পরামর্শ দেন তিনি।

যশোরের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, সত্যজিৎ অভূতপূর্ব পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে একদিনের জন্যেও ছু্টি নেননি। তার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও স্কুলে উপস্থিত হয়েছেন। এজন্য তাকে একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে মনে করেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।