না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে কাশ্মীরিরা !

Post Image

টানা তিনদিন ধরে কাশ্মীরে সবকিছু বন্ধ। বাজার খোলা নেই, এটিএম বুথও বন্ধ। কেউ চাইলেও ঘর থেকে বের হতে পারছে না, কারো সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। কার্যত বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই ভূস্বর্গ। এভাবে সব কিছু বন্ধ থাকলে দরিদ্র লোকজন তীব্র খাদ্য সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত সোমবার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়। এর ফলে প্রায় সাত দশক ধরে কাশ্মীর যে বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছিল তা হারাতে হলো। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পাশাপাশি সেখানে গত রোববার থেকেই কারফিউ চলছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, প্রতিটা রাস্তায় ও গলির মুখে নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা দিচ্ছে। দোকান, স্কুল-কলেজ, মোবাইল, ল্যান্ডফোন, ইন্টারনেট পরিষেবা- এমনকি টিভি চ্যানেলগুলোও বন্ধ। কাশ্মীরের বেশিরভাগ নেতাই আটক হয়েছেন। কাশ্মীরে অচলাবস্থায় বন্ধ হয়ে গেছে স্বাভাবিক খাবার সরবরাহ। ব্যাংক ও এটিএমগুলোতেও অর্থ নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কাশ্মীরবাসী। ৭২ ঘণ্টা পার না হতে তাই দোকানগুলোতেও শেষ হয়ে গেছে খাবার। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে বহুগুণ। তিন দিন ধরে চলা এই অচলাবস্থায় না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত অনেক কাশ্মীরির। গত সোমবার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় জম্মু-কাশ্মীর ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিশেষ অধিকার হারাচ্ছে। এ ছাড়া হারাচ্ছে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদাও। ভেঙে দুই ভাগ করা হচ্ছে কাশ্মীরকে। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। যে চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল, সেই চুক্তি বাতিল হওয়ার কারণে অন্যান্য রাজ্য থেকে কাশ্মীরে স্থায়ী আবাসস্থল গড়ে তোলা লাখ লাখ মানুষ এখন যেকোনো উপায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। হাজার হাজার মানুষ কাশ্মীর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের কেউ কেউ বাসস্থান না পেয়ে স্টেশনে বেশ কয়েক দিন কাটিয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না। এ অচলাবস্থায় কাশ্মীরে খাদ্যে স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে কাশ্মীরে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এদিকে, সেখানকার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন ধরেই কাশ্মীরের বাইরে থাকা লোকজন তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না। এক কাশ্মীরি জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে দিল্লিতে আছেন। মা-বাবাকে একা রেখেই দিল্লি গেছেন তিনি। তার বাড়ি শ্রীনগরে। কাজের সূত্রে তাকে দিল্লি থাকতে হচ্ছে। গত ২ আগস্ট শেষবারের মতো বাড়ি গিয়েছিলেন। সে সময়ই পরিস্থিতি অন্য রকম লাগছিল। অমরনাথে নাশকতার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বারামুলায় জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার? অথচ দুই এলাকা দু’দিকে অবস্থিত। এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় এটিএম থেকে টাকা তুলেছিলেন ৪ আগস্ট সকালে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দোকান-বাজার, এটিএম বুথ সব কিছুই বন্ধ আছে। শহরজুড়ে চলছে কারফিউ। তবে কাশ্মীরে প্রত্যেকের বাড়িতেই থাকে শাক-সবজির বাগান। তা দিয়েই তাদের প্রতিদিনের খাবার-দাবার চলে যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরবর্তীতে কী হবে সেটা কেউই জানে না। কেউ দিনের বেলা গাড়ি নিয়ে বের হলে সেনারা আটকাচ্ছে। রাতের দিকে পাহারা কম থাকে। সে কারণে লোকজন রাত ১০টার পর বাইরে যাচ্ছেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রতিবাদ হচ্ছে, লোকজন বিক্ষোভ করছে। সেনারাও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। তবে শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকানগুলো খোলা আছে। নার্সিংহোম, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোন উপায় নেই। যাদের গাড়ি নেই, তাদের কেউ অসুস্থ হলে কিভাবে হাসপাতালে নেবে? কারণ অ্যাম্বুল্যান্স ডাকাতো সম্ভব হচ্ছে না কারণ সব ফোনের সংযোগই তো বন্ধ। কোথাও আগুন লাগলেও একই অবস্থা হবে। তিনদিন পর সেখানে টিভির সম্প্রচার চালু হয়েছে। এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।