মালয়েশিয়ায় সম্রাটের সেকেন্ড হোমের খোঁজ

Post Image

মালয়েশিয়ার আমপাং তেয়ারাকুন্ডতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে।

এমনকি মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে সম্রাটের অ‌্যাকাউন্টে লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্যও আছে গোয়েন্দাদের হাতে। সেকেন্ড হোম প্রকল্পের আওতায় ওই জায়গায় ফ্ল্যাট আছে আরো দুই বিশিষ্ট বাংলাদেশির।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও এসব তথ্যের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। ফলে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ফেঁসে যেতে পারেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

সম্রাটের বাড়ি-গাড়ির প্রতি নেশা নেই বলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী যে দাবি করেছেন তা ভিত্তিহীন বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।

অনুসন্ধানকালে পুলিশের ইমিগ্রেশন উইং, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ, পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সেকেন্ড হোমের এজেন্ট, মালয়েশিয়ান হাইকমিশন অনুমোদিত বিভিন্ন ভিসা এজেন্ট থেকে পাওয়া তথ‌্য, পাসপোর্টের কপি, সেকেন্ড হোম প্রকল্পে অনুমোদনপ্রাপ্তদের অনুমোদনপত্রের কপি ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী যাচাই-বাছাইয়ে সম্রাটের মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার ও ফ্ল্যাট থাকার তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানা যায়।

সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে বাংলাদেশি বিভিন্ন নাগরিকের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছিল ২০১৮ সালের শেষের দিকে। অনুসন্ধানে সম্রাটসহ বেশকিছু ভিআইপি ব্যক্তির মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পরও অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেছে দুদক ও বিআইএফইউ।

যদিও তৎকালীন অনুসন্ধান দল তাদের অবৈধ সম্পদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। অদৃশ্য কারণে ওই অনুসন্ধান অনেকটা আড়ালে থেকে গেছে বলে জানা যায়। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে সেকেন্ড হোমের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে আরো জানা যায়, সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাস গড়তে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন, এমন স্বনামধন্য ২৩ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছিল দুদক। বিনিয়োগ করা অর্থের উৎসসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে দুদক বেশ কয়েকবার মালয়েশিয়ায় মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠিয়েও সঠিক জবাব পায়নি। অনুসন্ধানকলে বিভিন্ন সংস্থার থেকে পাওয়া অন্তত ১৩ ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ২০১৮ সালের শেষের দিকে দুদকের অনুসন্ধান দল একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের অনুমতি চায়। তবে কমিশন অনুমতি দেয়নি। তারা বিষয়টি আরো যাচাই-বাছাই করছেন। কারণ, মালয়শিয়া সেকেন্ড হোমে প্রকল্পে বিনিয়োগ মানেই তো অর্থপাচার নয়। বিবেচ্য বিষয় হলো- কেউ বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার করা অর্থ সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করেছেন কি না। কারণ, মালয়শিয়ায় সেকেন্ড হোম বৈধ প্রকল্প। মালয়েশিয়া সরকারও সরাসরি কোনো তথ্য দিতে নারাজ। তারা বিনিয়োগকারীর  অর্থপাচার সংশ্লিষ্ট অপরাধের প্রমাণ চায়।

এ বিষয়ে দুদকের সচিব দিলোয়ার বখ্‌ত্‌ মিডিয়া কে বলেন, অবৈধ ক্যাসিনোর মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন কিংবা অর্থ পাচারের বিষয়ে যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে দুদক তা অনুসন্ধান করে দেখছে। এ বিষয়ে নতুন কোনো বক্তব্য নেই। অনুসন্ধান শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।

অবৈধ ক্যাসিনোর মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অন্তত ২৫ জনের বিরুদ্ধে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

ক্যাসিনো অভিযানের পর থেকে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এর পরেই তাদের যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল দুপুরে সম্রাটকে ঢাকায় এনে তাকে নিয়ে কাকরাইল কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। এছাড়া তার ভাই এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসাতেও তল্লাশি চালানো হয়। এসব স্থান থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক, দেশি-বিদেশি মুদ্রা, সোনা এবং ক্যাঙ্গারুর দুটি চামড়া উদ্ধার করা হয়। অভিযান শেষে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। এরইমধ্যে অবৈধভাবে ক্যাঙ্গারুর চামড়া রাখার অভিযোগে ৬ মাস করে সাজা দিয়েছেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে।

অন্যদিকে, গত এক যুগে অন্তত ৩ হাজার ৩৪৫ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ‌্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতের নেতাসহ শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও আমলা রয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল বর্তমানে এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।