এসকেএফের 'রেমিভির' অনুষ্ঠানিক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা আশার আলো দেখছেন

Post Image

দেশের ওষুধ প্রস্তুকারি অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান এসকেএফের তৈরি রেমডেসিভির ইনজেকশান করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এসকেএফ ওষুধটির উৎপাদন প্রক্রিয়া শেষ করেছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়তে এদেশেরচিকিৎসকেরা একটি অস্ত্র হাতে পেলেন। ওষুধটি যত দ্রুত বাজারজাত করার অনুমোদন পাবে দেশের মানুষ ততই এর সুফল পাবে। এসকেএফ ওষুধটি 'রেমিভির' নামে বাজারজাত করবে।

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে রেমডেসিভির বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও এসকেএফের নতুন ওষুধের পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা এ কথা বলেন।অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন (বিএসএম) ও এসকেএফ। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপকএ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, রেমডেসিভির করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা বা করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে। এসকেএফকে ধন্যবাদ তারা এটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন যত তাড়াতাড়ি বাজারে আসে ততই ভালো। এই ওষুধটি বাজারে আসলে চিকিৎসক ও রোগী দুপক্ষই ভরসা পাবে। এসকেএফ এই ওষুধটি তৈরি করেছে জেনে অনেকেই আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন।' তিনি বলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র এই ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে, তখন ভেবেছিলাম এটি বাংলাদেশে আসতে হয়তো ৬ মাস লেগে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি।

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদুল কবীর এবং এসকেএফের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের পরিচালক ডা. মুজাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এসকেএফ ইতিমধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে বাজারজাত করার অনুমোদনের জন্য ওষুধের নমুনা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জমা দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে একটি তথ্যচিত্রে দেখানো হয়, 'রেমিভির' উৎপাদন করা হয়েছে এসকেএফের ফারাজ আইয়াজ হোসেন ভবনের প্ল্যান্টে। সেখানে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সর্বোচ্চ মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। প্লান্টটি একাধিক আন্তর্জাতিক মাননিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা অনুমোদিত।

মূল উপস্থাপনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক রোবেদ আমিনভাইরাসটি কীভাবে দেশে প্রবেশ করে মানুষকে অসুস্থ করে তোলে এবং কখন মৃত্যু ঘটায় সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

রোবেদ আমিন বলেন, যে করোনাভাইরাসটি মহামারী আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ওষুধ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন।
ম্যালেরিয়া, নিউমোরিয়া এমনকি এইচআইভির জন্য ব্যবহৃত ওষুধও করোনা আক্রান্ত রোগীদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে হাঁচি–কাশির অতি ক্ষুদ্র কনা কিছু সময় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। ফলে সামাজিক দুরুত্ব মেনেও ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পাওয়া নাও যেতে পারে। তাই এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভ্যাকসিন বা ওষুধ খুবই জরুরি।
ঢাকা মেডিকেলের এই অধ্যাপক বলেন, সম্প্রতি রেমডেসিভির ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন দিয়েছে। সেখানে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। জাপানও অনুমোদন দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ হচ্ছে কোনো অস্ত্র ছাড়াই। এখন হয়তো কোনো অস্ত্র নেই। কিন্তু আমরা ঠিকই এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রতিষেধক তৈরি করতে পারবো। আমরা সামনে এগোচ্ছি। ডেটা সংগ্রহ করছি। তিনি এসকেএফকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, মানুষকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য সুষ্পষ্ট কোনো ওষুধ তৈরি হয়নি। রেমডেসিভির রোগীর চিকিৎসার সময় কমিয়ে আনছে। তবে মৃত্যু কমাতে পারে সুষ্পষ্ট প্রমাণ নেই। কিন্তু তারপরও রেমডেসিভির গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তিনি বলেন, আমার পরামর্শ হচ্ছে করোনাভাইরাসের জন্য গঠিত জাতীয় কমিটিকে এটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যারা হাসপাতালে যাচ্ছে, অক্সিজেন নিচ্ছে সেই রোগীদের রেমডেসিভির দেওয়া এবং এ সংক্রান্ত তথ্য রাখা। তিনি এসকেএফকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, এটা অবিশ্বস্য যুক্তরাস্ট্রে রেমডেসিভির অনুমোদনের অল্প সময়ের মধ্য তা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে।
এসকেএফের রেমডেসিভির গোত্রের ওষুধ `রেমিভির` পরিচিতমূলক অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো
এসকেএফের রেমডেসিভির গোত্রের ওষুধ `রেমিভির` পরিচিতমূলক অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো

বিএসএমের সভাপতি অধ্যাপক বিল্লাল আলম দেশের ৯৭ হাজার চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এসকেএফকে ধন্যবাদ জানান।

এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন বলেন, করোনা মহামারীর এই সময়ে চিকিৎসক–স্বাস্থ্যকর্মীরাই সামনের সারিতে থেকে জাতির রক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সব প্রটোকল মেনেই রেমিভির তৈরি করা হয়েছে। যারা ওষুধ তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করবেন তাদের কাছে থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কোনো বাধা ছাড়াই সরবরাহের নিশ্চয়তা নেওয়া হয়েছে। তিনি করোনার বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভালো অবস্থানে আছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক দিলীপ কুমার ধর, অধ্যাপক আবদুর জলিল প্রমুখ।